ত্বকের সুরক্ষায় অন্যতম প্রধান স্কিনকেয়ার প্রডাক্ট হলো সানস্ক্রিন। রোদের প্রখর তাপে আমাদের ত্বক পুড়ে যায়, হয়ে ওঠে মলিন। এছাড়া ত্বকে কালো কালো ছোপ ছোপ দাগ, রিংকেল, ফাইন লাইন ইত্যাদির সমস্যা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির কারণেই হয়।
সূর্যের ইউভি রশ্মি থেকে ত্বকের এসব সমস্যা ছাড়াও সবচেয়ে বড় যে ঝুঁকি সেটি হলো স্কিন ক্যান্সার। এদিকে ঘরের বাইরে সবাইকেই কম বেহসি বের হতেই হয় আর সান এক্সপোজারেও যেতে হয়। তাই এই সমস্যার সবচেয়ে বড় সমাধান হলো প্রতিদিন নিয়ম অনুযায়ী সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করা।
সানস্ক্রিন ক্রিমের গ্রিজিনেসের জন্য তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী যারা তারা সানস্ক্রিন মাখতে ভয় পান। কারণ গ্রিজি সানস্ক্রিন মাখলে ত্বকে কোন মেকআপ ও ঠিক মত বসে না, ত্বক দেখায় তেল চুপচুপে এবং ব্রণের সমস্যা বেড়ে যায়। তবে এখন কিন্তু বাজারে তৈলাক্ত ত্বকের জন্যেও দারুণ সব সানস্ক্রিন রয়েছে।
এই আর্টিকেলে আমরা জানবো তৈলাক্ত ত্বকের সেরা ৫টি সানস্ক্রিন ক্রিম সম্পর্কে।
ত্বক যদি হয় তৈলাক্ত আর সেই ত্বকে যদি ব্যবহার করা হয় সাধারণ সানস্ক্রিন, তাহলে ত্বকে তেলের পরিমাণ আরো বেড়ে যায় এবং অতিরিক্ত ঘাম হতে থাকে। ফলে বাইরে বের হলে তেল চুপচুপে দেখায় ও মেকআপ দ্রুত ঘামে গলে গিয়ে নষ্ট হয়ে যায়।
তাই তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এমন সানস্ক্রিন বাছাই করতে হবে যা ত্বকে অয়েল ব্যালেন্স করতে সাহায্য করবে, ত্বকে তেলও চুপচুপে ভাব আনবে না, নন গ্রিজি ম্যাট ও ফিনিশ দেবে। চলুন জেনে নিই এমন ৫টি সানস্ক্রিন ক্রিম সম্পর্কে যা তৈরি হয়েছে শুধুমাত্র তৈলাক্ত ত্বকের জন্য।
ত্বকের যত্নে মিশা অল এরাউন্ড সেইফ ব্লক ফিনিস সান মিল্ক দারুণ কার্যকরী এক সানস্ক্রিন। এটি ত্বককে যেমন ইউভি রশ্মি থেকে বাঁচায় তেমনি স্বাভাবিক স্কিনটোন বজায় রেখে ত্বককে গ্লোয়িং করে তোলে। এই ক্রিমটির এসপিএফ ৫০ তাই আপনার ত্বককে সূর্যালোক থেকে দেয় পূর্ণ সুরক্ষা।
চলুন জেনে নিই এর কিছু উপকারিতা:
- এটি স্কিনকে ডাবল লেয়ারে সুরক্ষা দেয়।
- লাইট এবং সফট টেক্সচারের জন্য এটি সহজেই ত্বকে মিশে যায় অর্থাৎ ত্বকে ভারি কিছু অনুভূত হয় না।
- স্কিনে ঘাম ঘাম ভাব আসে না বলে এটা রিএপ্লাই করতে কোনো অসুবিধা হয় না।
- এতে রয়েছে ফ্রুট আর থানাকা এক্সট্র্যাক্ট যা ত্বককে দীর্ঘ সময় হাইড্রেটেড করে রাখে।
- এর এসএপিএফ ৫০ এবং পিএ+++ ত্বককে দীর্ঘ সময় সুর্যালোক থেকে রক্ষা করে।
- সানস্ক্রিনটিতে রয়েছে গ্লাইকোফ্লিম ১.৫পি যা আপনার ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।
যেভাবে ব্যবহার করবেন:
সানস্ক্রিন সকালের ত্বকচর্চার শেষ ধাপ। তাই পরিমাণ মত মিশা অল এরাউন্ড সেইফ ব্লক ফিনিস সান মিল্ক আঙুলের ডগায় নিয়ে ত্বকে আলতো লাগিয়ে নিয়ে ড্যাব ড্যাব করে ফিনিশিং মাসাজ করুন। ব্যবহারের আগে সানস্ক্রিনের বোতলটি ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিন।
সানস্ক্রিন জগতে নিউট্রোজিনা আল্ট্রা সির ড্রাই- টাচ সানব্লক অন্যতম সেরা সানস্ক্রিন ক্রিম। এর এসপিএফ ৫০ যেমন ত্বককে সুরক্ষা দেয়, তেমনি ত্বককে রাখে নরম ও কোমল। এমনিতেই এই ব্র্যান্ডের সানস্ক্রিন অসম্ভব জনপ্রিয়। বিশেষত ড্রাই-টাচ সানব্লকটি ওয়াটারপ্রুফ হওয়ায় তৈলাক্ত ত্বকের মানুষেরা এটা বেশি পছন্দ করেন।
তাহলে চলুন জেনে নিই কি কি উপকার রয়েছে এই সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহারে:
- নিউট্রোজিনা আল্ট্রা সির ড্রাই- টাচ সানব্লক ওয়াটারপ্রুফ এবং সোয়াটপ্রুফ হবার কারণে ত্বকে পানি লাগার পরেও সূর্যালোক থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।
- অলস্কিন টাইপ সানস্ক্রিন হবার কারণে যে কোনো ত্বকে সহজেই মানিয়ে যায়।
- এই সানস্ক্রিনটি অয়েল ফ্রি তাই আপানর ত্বকের পোরসের মধ্যে ঢুকে থাকেনা আর পোরস ব্লকও করে না।
- সেনসিটিভ ত্বকের জন্য উপযোগী।
- লাইটওয়েট হওয়ার কারণে অয়েলি স্কিনে ব্যবহার করা যায়।
- ত্বকে একটা ম্যাট ফিনিশিং দেয় কিন্তু হোয়াইট কাস্ট হয় না বা মুখে ভেসে থাকে না।
যেভাবে ব্যবহার করবেন:
বেসিক স্কিনকেয়ার রুটিনের একদম শেষ ধাপে এবং মেকআপের শুরুতেই সানস্কিরন পরিমাণমত লাগিয়ে নিন।আলতো হাতে ড্যবা ড্যাব করে মাসাজ করে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন যেন ত্বক এটি পুরোপুরি শুষে নিতে পারে।
বর্তমানে সানস্ক্রিন ক্রিমের যতগুলো ব্র্যান্ড রয়েছে কজারেক্স তার মধ্যে অন্যতম। কজারেক্সের এলো সুদিং সান ক্রিম এতোটাই লাইটোয়েট যে এটা সানস্ক্রিন নাকি ময়েশ্চারাইজার তা অনেকেই ভুল করেন। কাজেই তৈলাক্ত ত্বকে একদমই ভারি অনুভূত হয় না। তাছাড়া এতে রয়েছে এলো এক্সত্র্যাক্ট যা তৈলাক্ত ত্বকের অয়েল ব্যালেন্স করতে দারুণ সহায়ক। চলুন দেখে নিই এই সানস্ক্রিনের কার্যকারিতা।
উপকারিতা-
- এই সানস্ক্রিন একদম ময়েশ্চারাইজারের মত লাইটওয়েট তাই তৈলাক্ত ত্বকে ব্যবহার করলে একদমই চিপচিপে অনুভূত হয় না।
- এত ব্যবহারে ত্বকে কোন হোয়াইট কাস্ট দেখা যায় না।
- এত তৈলাক্ত ত্বকেও ময়শ্চার লেভেল বজায় রাখে ফলে স্কিন হাইড্রেটেড থাকে দিনভর।
- এলোভেরা এক্সট্র্যাক্টের কারণে ত্বকে লম্বা সময় ধরে একটা স্টেজ অনুভূতি বজায় থাকে।
- এর এসপিএফ ৫০ আপনার ত্বককে লম্বা সময় সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয়।
- এটি নিয়মিত ব্যবহারে আপনার ত্বকে বলিরেখা, ফাইন লাইন, রিংকেল ইত্যাদি সমস্যা দুর হয়।
মিশা একুয়া সান জেল তৈলাক্ত ত্বকের জন্য আরেকটা হোলি গ্রেইল প্রোডাক্ট। এমনিতেই তৈলাক্ত ত্বকে জেল টাইপ সানস্ক্রিন সহজেই মিশে যায় আর ম্যাট ইফেক্ট দেয়। মিশা একুয়া সান জেল একই সাথে ত্বকে ননগ্রিজি ভাব এনে দেয় আবার ত্বককে শুষ্ক ও করে তোলে না। চলুন জেনে নিই এই সানস্ক্রিনের কার্যকারিতা।
উপকারিতা-
- এই সানস্ক্রিনের ওয়াটার বেইজড জেল ফর্মুলা ত্বকে এক্সট্রা হাইড্রেশন যোগাতে সাহায্য করে। তাছাড়া এটি ত্বককে দীর্ঘ সময় নরম ও কোমল রাখতে সাহায্য করে।
- এই সানস্ক্রিন মুখে এপ্লাই করার পর দীর্ঘ সময় ত্বকে কোন ঘাম হয় না বা মেকআপ গলে পড়ে না।
- এর এসপিএফ ৫০ ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে পুর্ণ সুরক্ষা দেয়।
- স্কিন তেক্সচার উন্নত করতে সহায়তা করে।
- ত্বকের প্রিম্যাচিউর এজিং রোধ করে।
- এটি ওয়াটারপ্রুফ ময়েশ্চারাইজার।
সানস্ক্রিনের নাম শুনলেই সবার আগে যে ব্র্যান্ডের নাম মনে পড়ে তা হলো নিউট্রোজিনা। নিউট্রোজিনা অয়েল ফ্রি ময়েশ্চারাইজারটি আসলে সানস্ক্রিন প্লাস ময়েশ্চারাইজার দুটোর কাজই করে। এসপিএফ ১৫ থাকার কারণে সহজেই এটা ত্বককে সূর্যালোক থেকে রক্ষা করতে পারে আবার অয়েল ফ্রি হবার কারণে তৈলাক্ত ত্বকে ময়শ্চারাইজার হিসেবেও কাজ করে।
উপকারিতা-
- এই ক্রিমে রয়েছে এসপিএফ ১৫ যা ত্বককে দীর্ঘ সময় সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয়।
- এটি ত্বককে লম্বা সময় নরম ও কোমল রাখে এবং ত্বকের অয়েল ব্যালেন্স করতে সহায়তা করে।
- এটি অয়েল ফ্রি হওয়ায় তৈলাক্ত ত্বকে গ্রিজিনেস অনুভূত হতে দেয় না।
- এই ক্রিমটি ডার্মাটোলজিস্ট টেস্টেড এবং নন কমেডোজেনিক।
- এতে কোন সুগন্ধ নেই।
- এটি পোরস ক্লগ করে দেয় না।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য সানস্ক্রিন বাছাই করা খুব ঝামেলার। কারণ বেশিরভাগ সানস্ক্রিনেই গ্রিজিনেস থাকে। আবার এদিকে তৈলাক্ত ত্বকে গ্রিজি সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে ত্বক যেমন তেল চুপচুপে দেখায় তেমনই ত্বকে ব্রণ ওঠার প্রবণতাও বেড়ে যায়।
তাই তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এমন সানস্ক্রিন বাছাই করতে হবে যা ননগ্রিজি। অর্থাৎ একই সাথে সূর্যের ইউভি রে থেকে ত্বককে বাঁচাবে আবার ত্বকের তৈলাক্ত ভাবও দূর হবে। তেমনই কিছু সানস্ক্রিন এর নাম দেয়া হলো:
১। মিশা অল এরাউন্ড সেইফ ব্লক ফিনিস সান মিল্ক
২। কজারেক্স এলো সুদিং সান ক্রিম
৩। নিউট্রোজিনা আল্ট্রা সির ড্রাই- টাচ সানব্লক
৫। নিউট্রোজিনা অয়েল-ফ্রি ময়েশ্চার
বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী শুধুমাত্র বাইরে নয় বরং ঘরে থাকা অবস্থাতেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। ঘরের বাইরে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি যেমন রয়েছে, তেমনই ঘরের ভিতর রয়েছে আগুনের আঁচ, গরম, নানারকম ডিভাইসের তাপ/রশ্মি ইত্যাদি। এসব কিছুই ত্বকের ক্ষতি করতে পারে বা কালো করে তুলতে পারে।
চলুন জেনে নিই সানস্ক্রিন মাখলে আপনি কি কি উপকার পাবেন:
- সানস্ক্রিন ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয়।
- ত্বকের কোলাজেন লেয়ার বজায় রাখে ফলে ত্বকে বয়সের ছাপ সহজে পড়ে না।
- ত্বককে মেছতা ও কালো ছোপ ছোপ দাগ হতে রক্ষা করে।
- বলিরেখা বা ফাইন লাইনস থেকে বাঁচায়।
- ত্বকের কোষকে হেলদি রাখে ফলে ত্বক ভিতর থেকে উজ্জ্বলতা হারায় না।
যেনতেন ভাবে সানস্ক্রিন লাগালে এটা কখনোই ভালো ফলাফল বয়ে আনবে না। তাই সানস্ক্রিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়ম অবশ্যই মেনে চলতে হবে। সাধারণত ঘুম থেক উঠেই আমরা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলি।
রেগুলার স্কিনকেয়ারের সমস্ত ধাপ শেষ করে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে তারপর সানস্ক্রিন লাগানো উচিত। সানস্ক্রিনকে আপনার স্কিনকেয়ারের শেষ ধাপ হিসেবে রাখুন। কখনোই সানস্ক্রিন লাগানোর পর ফেসিয়াল অয়েল বা এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করবেন না। এতে করে ত্বকে গ্রিজিনেস দেখা দেয় এবং তা থেকে ব্রণ তৈরি হতে পারে।
প্রথমে পরিমাণ মত ক্রিম আঙুলের ডগায় নিয়ে পুরো ত্বকে ভালো করে মেখে নেবেন। এরপর আঙুলের মাথার সাহায্যে কিছুক্ষণ মাসাজ করার পর ড্যাব ড্যাব করে নিলে আর হোয়াইট কাস্ট দেখা যাবে না। বাসা থেকে বের হওয়ার ঠিক ৩০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন মাখবেন। এতে করে এটি আপনার ত্বকে প্রয়োজনীয় লেয়ার তৈরি করবে যা সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে আপনার ত্বককে রক্ষা করবে।
তৈলাক্ত ত্বকের সঠিক যত্ন না নিলে ব্রণ এবং সুর্যের ক্ষতিকর রশ্মি- দুই মিলে ত্বকের ক্ষতি সাধন করে। সঠিক সানস্ক্রিন বাছাইয়ের মাধ্যমে আপনার তৈলাক্ত ত্বকে সূর্যের রশ্মির কোন ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না। আবার এদিকে ত্বকের অয়েল ব্যালেন্স ও ঠিক থাকে। তাই সানস্ক্রিন বাছাই করার আগে অবশ্যই ত্বকের ধরন বুঝে বাছাই করুন।