চুল পড়ে মাথা টাক হয়ে যাচ্ছে, ঘন চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে, নিয়মিত চুল ঝরে পড়ছে- এই সমস্যায় কম বেশি সবাইই ভুগছে। ঘন চুল পাতলা হতে দেখলে কাড় না মন খারাপ হয়? কিন্তু এটা সেটা কতো কি করার পরেও চুল পড়া সহজে বন্ধ হয় না। এর কারণ কি জানেন?
কারণ, বয়সের সাথে সাথে আমাদের শরীরে মেটাবোলিজম বদলে যেতে থাকে। এছাড়া পরিবেশের প্রভাব ও শারীরিক অন্যান্য অসুবিধার কারণেও নিয়মিত হেয়ার ফল হতে পারে। তবে এটা নিয়ে মন খারাপের কিছুই নেই। কারণ চুল পড়া বন্ধ করতে না পারলেও নানারকম প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করলে নতুন চুল গজাতে পারে।
এই আর্টিকেলে আমরা জানবো প্রাকৃতিক উপায়ে কীভাবে নতুন চুল গজানো যায়।
অনেক সময় নানারকম উপায় অবলম্বন করলেও চুল পড়া রোধ করা সম্ভব হয় না। তবে আপনি যদি প্রাকৃতিক কিছু নিয়ম মেনে চলেন তাহলে কিন্তু আবার নতুন করে চুল গজানো সম্ভব। চলুন জেনে নিই কোন কোন উপায়ে আপনার মাথায় নতুন করে চুল গজানো সম্ভব।
মাথার ত্বক বা স্কাল্পে নিয়মিত রক্ত সঞ্চালনের ফলে নতুন চুল গজায়। রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে নিয়মিত মাথার ত্বক বা স্কাল্প মাসাজ করা। আঙুলের ডগার সাহায্যে নিয়মিত মাথার স্কাল্পে মাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে গিয়ে চুলের গোঁড়া শক্ত হয় ও নতুন চুল গজায়।
তবে আরো ভালো উপকার পাবেন যদি ভিটামিন ই অয়েল দিয়ে স্কাল্পে মাসাজ করতে পারেন। ভিটামিন ই অয়েলে রয়েছে চুলের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি জা নতুন চুল গজাতে ও মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক। এছাড়া ভিটামিন ই অয়েলের সাথে চাপাতার নির্যাস ও যোগ করা যেতে পারে।
চুলে ভিটামিন ই ও চাপাতার নির্যাস একসাথে লাগিয়ে মাসাজ করলে অবশ্যই শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে চুল ভালোভাবে ধুয়ে নেবেন। প্রতিদিন অন্তত তিন বার ভিটামিন ই অয়েল দিয়ে মাথায় মাসাজ করুন। তবে শ্যাম্পু একবারই করবেন।
চুলের যত্নে ভিটামিন ই অয়েলের জুড়ি নেই। ভিটামি ই অয়েলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট যা চুলকে তাড়াটারই বাড়তে সাহায্য করে। স্কাল্পে ভিটামিন ই অয়েল দিয়ে নিয়মিত মাসাজ করলে হেয়ার ফলিকল যেমন উন্নত হয় তেমনি স্কাল্পে অক্সিজেন সরবরাহ ও ঠিক মত হয়।
এছাড়া ভিটামিন ই মাথার ত্বকে প্রয়োজনীয় ময়েশ্চার যোগায় কিন্তু অতিরিক্ত তেলতেলে করে দেয় না। ফলে স্কাল্প শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা পায় যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক। তাই নিয়মিত ভিটামিন ই অয়েল দিয়ে চুল মাসাজ করলে নতুন চুল গজাবে।
চুলে আমরা সবাইই শ্যাম্পু ব্যবহার করি ঠিকই, কিন্তু সঠিক নিয়মে কি ব্যবহার করি? শ্যাম্পু মাথার ত্বকের মৃত কোষ দুর করতে সহায়তা করে, তাই নিয়মিত শ্যাম্পু ব্যবহার করলে মাথার ত্বক যেমন পরিস্কার থাকে তেমন এটা চুল বাড়তে সাহায্য করে।
তবে শ্যাম্পু করার আগে জানতে হবে শ্যাম্পু করার সঠিক নিয়ম। নখের সাহায্যে, তালুর সাহায্যে জোরে জোরে স্কাল্পে ঘসাঘসি করলে তা চুলের গোড়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ও চুলের বৃদ্ধি রোধ করে।
- প্রথমে হাতে পরিমাণ মত শ্যাম্পু নিয়ে অল্প পানি দিয়ে ফোম তৈরি করুন।
- তারপর সেটা মাথার স্কাল্পে আলতো করে মাসাজ করুন। মাসাজ করার সময় আঙুলের ডগা দিয়ে আস্তে আস্তে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মাসাজ করবেন।
- স্কাল্পে মাসাজ হয়ে গেলে বাকি ফোম দিয়ে চুলের বাকি অংশে ভালোভাবে মাসাজ করুন।
- বেশি করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চুল ভালোভাবে ধুয়ে কন্ডিশনার লাগিয়ে নিন।
- হেয়ার ডরাইয়ার অথবা ঠাণ্ডা বাতাসে চুল ভালোভাবে শুকিয়ে নিন।
চুলের প্রতিদিনের যত্নের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার না খেলে আপনার চুলের বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যে তার প্রভাব পড়বে। কিছু কিছু খাবার আছে যা নিয়মিত ও পরিমাণ মত গ্রহণ করলে নতুন চুল গজায় ও চুলের বৃদ্ধি বাড়ে।
চুলের গঠন মূলত কেরাটিন দিয়ে হয়। কেরাটিন মূলত এক ধরনের প্রোটিন যা তৈরি হয় এমিনো এসিড থেকে। তাই এমিনো এসিড যুক্ত প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি করে গ্রহণ করুন। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, পনিরে পর্যাপ্ত পরিমাণ এমিনো এসিড থাকে তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এসব খাবার রাখুন।
অনেক বীজ, ডাল, মটর শুটি এসবেও প্রচুর পরিমাণে এমিনো এসিড থাকে। তবে উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের চেয়ে প্রাণীজ প্রোটিনে এমিনো এসিডের পরিমাণ বেশি।
চুলের গ্রোথের জন্য বায়োটিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। বায়োটিন বা ভিটামিন বি-৭ চুলে কেরাটিন উৎপাদনে সহায়ক। শরীরে বায়োটিনের পরিমাণ কম থাকলে দ্রুত চুল পড়ে যায়। ডিম ও বাদাম জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণ বায়োটিন থাকে তাই প্রতিদিনের খাবারে এগুলো থাকলে শরীরে বায়োটিনের লেভেল ঠিক থাকে ও চুল পড়া বন্ধ হয়ে নতুন চুল গজায়।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেলে চুলের বৃদ্ধিতে তার প্রভাব পড়ে। পেয়ারা, কমলা, লেবু, আনারস ইত্যাদি জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে যা নতুন চুল গজাতে সহায়ক।
আয়রন ও জিংক জাতীয় খাবার ও কিন্তু নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। আয়রন এবং জিংক মাথার ত্বকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন যোগায়। এছাড়া চুলের গোঁড়া শক্ত করতে, নতুন টিস্যু তৈরি করতে এবং চুলের ক্ষয়রোধেও সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পরিমাণমত আয়রন ও জিং সমৃদ্ধ খাবার রাখুন।
মটরশুঁটি, কলিজা, মাংস, দুধ, কচু জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও জিংক থাকে।
চুল পড়া রোধে নানারকম সমাধান তো আছেই, সেই সাথে নতুন চুল গজানোর ও অনেক উপায় রয়েছে। তাই চুল কমে গেলে বা পাতলা হয়ে গেলে দুশ্চিন্তার কিছুই নেই। নিয়ম মেনে চুলের যত্ন করুন ও ডায়েট বজায় রাখুন। তাহলে আপনিও পেতে পারেন ঘন ও সুন্দর চুল।