দীর্ঘক্ষণ মেকআপ করে থাকা, বাইরের ধুলা-বালি এবং রোদের সংস্পর্শে থাকা, হরমোনাল ইমব্যালেন্স সহ নানাকিছুর প্রভাবা আমদের ত্বকে পড়ে। ফলে ত্বক উজ্জ্বলতা হারায়, হয়ে ওঠে মলিন। এছাড়া প্রতিনিয়ত ধুলাবালির সংস্পর্শে আসতে আসতে কখন জানি দু একটা ছোটো ছোটো ব্রণ, আর এরপর সারামুখ জুড়ে ব্রণের প্রভাব।
ব্রণের সমস্যার মুখোমুখি হন নি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া দায়। কিন্তু আমরা যদি প্রতিদিন সঠিক নিয়মে আমাদের ত্বক পরিস্কার করি তবে বরনের সমস্যা অনেকাংশেই সমাধান হতে পারে।
এই আর্টিকেলে আমরা জানবো ব্রণ দূর করতে ফেসওয়াশ কেন প্রয়োজন, ব্রণের জন্য কোন ফেসওয়াশগুলো সবচেয়ে কার্যকরী এবং ফেসওয়াশ ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।
ব্রণের মত দুঃস্বপ্ন মানুষের জীবনে কমই আছে। মূলত ত্বক নিয়মিত ও সঠিকভাবে পরিষ্কার না করলে ত্বকের বিভিন্ন জায়গায় ব্রণ দেখা দেয়। এছাড়া ঠিকমত মেকআপ না তোলা, অতিরিক্ত জাংক ফুড খাওয়া, পরিমাণে কম পানি পান করা ইত্যাদি কারণেও ব্রণ দেখা দিতে পারে। ত্বকে অতিরিক্ত তেল-ময়লা জমে পোরসের মুখ বন্ধ হয়েও ব্রণ দেখা দেয়।
কাজেই, ত্বককে পরিষ্কার রাখার বিকল্প নেই। নিয়মিত সকালে ও রাতে যদি ত্বক ভালো একটি ফেসওয়াশ দিয়ে পরিস্কার রাখেন, তাহলে ব্রণের সমস্যা অনেকাংশেই সমাধান করা সম্ভব।
চলুন জেনে নিই ত্বককে পরিষ্কার ও ব্রণমুক্ত রাখতে সেরা ৫টি ফেসওয়াশ সম্পর্কে:
আপনি যদি বাজেট-ফ্রেন্ডলি ফেসওয়াশের কথা চিন্তা করেন তাহলে মামাআর্থ টি ট্রি ফেসওয়াশ আপনার জন্য দারুণ একটা অপশন। এটি ত্বকের গভীরে পৌঁছে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং ত্বকের অতিরিক্ত তেল শুষে নেয় বিধায় ব্রণ ওঠা কার্যকরভাবে বন্ধ হয়।
সব ধরনের স্কিনেই মামাআর্থের এই ফেসওয়াশটি দারুণভাবে কার্যকর। তবে যাদের একনেপ্রোন স্কিন অথবা ব্রণের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য এটা বেস্ট রেজাল্ট দেয়। ১৫ বছরের উপড়ে ছেলে ও মেয়ে উভয়েই এটা ব্যবহার করতে পারবে।
উপাদান: নিম ও টি ট্রি অয়েল
উপকারিতা:
- প্রাকৃতিক উপাদান নিম ও টি ট্রি অয়েলে সমৃদ্ধ ফেসওয়াশটি প্যারাবেন ফ্রি তাই স্কিন ইরিটেশন হয় না।
-এটি ত্বককে ডিপ ক্লিন করে ত্বকের যাবতীয় ইম্পিউরিটি দুর করে এবং ত্বককে ভিতর থেকে উজ্জ্বল করে।
- এই ফেসওয়াশ ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করে ব্রণ ওঠা বন্ধ করে এবং ত্বকের তৈলাক্তভাব দুর করতে সাহায্য করে।
- এই ফেসওয়াশে রয়েছে এলোভেরা যা ত্বকের ইনফ্ল্যামেশন দুর করে এবং লাল লাল ভাব কমায়।
- মামাআর্থের ফেসওয়াশটি ডার্মাটোলজিক্যালি টেস্টেড তাই ত্বকের যত্নে একদম পার্ফেক্ট।
- ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং মসৃণ করে তোলে।
- কোনো ধরনের ক্ষতিকর কেমিকেল বা কৃত্রিম সুগন্ধি নেই।
ব্যবহারবিধি:
১। প্রথমে ত্বককে ভিজিয়ে নিন।
২। আঙ্গুলের মাথায় অল্প পরিমাণ ফেসওয়াশ নিয়ে মুখে এপ্লাই করুন।
৩। হাল্কাভাবে আঙুলের সাহায্যে মাসাজ করুন। মৃদু ফেনা তৈরি হবে। আঙুলের সাহায্যে সার্কুলারভাবে মাসাজ করতে থাকুন।
৪। কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
৫। তোয়ালে দিয়ে ড্যাব ড্যাব করে মুছে নিন।
সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য প্রতিদিন দুইবার করে ব্যবহার করুন।
রাজকন্যা একনে ফাইটিং ফেসিয়াল ওয়াশ উইথ জোজোবা বিডস আরেকটি চমৎকার বাজেট-ফ্রেন্ডলি ফেসওয়াশ। এর প্রাকৃতিক উপাদান আপনার ত্বকের ব্রণ দুর করার পাশাপাশি ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
উপাদান: থানকুনি পাতা, গ্রিন টি, জোজোবা এক্সট্র্যাক্ট
উপকারিতা:
এই ফেসওয়াশে রয়েছে থানকুনি পাতা ও গ্রিন টি এর নির্যাস যা প্রাকৃতিকভাবে আপনার ত্বক থেকে ব্রণ সমস্যা দুর করে।
এই ফেসওয়াশের জোজোবা এক্সট্র্যাক্ট আপনার ত্বকের ময়লা ও ইম্পিউরিটি দুর করে এবং অতিরিক্ত সেবাম শুষে নেয়, ফলে ত্বকের ক্লগড পোরসের সমস্যা দুর হয় এবং ব্রণ ওঠা বন্ধ হয়।
ত্বকের ব্লেমিশ দুর করতে সাহায্য করে।
এই ফেসওয়াশ ত্বকে আলাদাভাবে ময়েশ্চার যুক্ত করে যা ত্বকর স্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং ভিতর থেকে গ্লোয়িং করে তোলে।
এটি অয়েল ফ্রি ফেসওয়াশ তাই ত্বকে একদম ক্ষার অনুভূত হয় না।
কারা ব্যবহার করতে পারবে?
সব ত্বকের জন্যই এই ফেসওয়াশ উপযোগী তবে যাদের ত্বক অয়েলি টু কম্বিনেশন, তাদের ক্ষেত্রে এটা বেস্ট রেজাল্ট দেয়। টিনেজ যে কেউ এটা ব্যবহার করতে পারবে।
অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বকের জন্য নিউট্রোজিনা অয়েল ফ্রি একনে ওয়াশ একটা আশীর্বাদ। তৈলাক্ত ত্বকে সেবামের কারণে ব্রণ পিছু ছাড়তেই চায় না। সেক্ষেত্রে এই ফেসওয়াশটি নিয়মিত ব্যবহারে ব্রণের সমস্যা পুরোটাই নিরাময় হয়।
উপাদান: স্যালিসাইলিক এসিড
উপকারিতা:
- জেল টাইপের এই ফেসওয়াশটি পুরোপুরি তৈরি করা হয়েছে বিশেষত তৈলাক্ত ত্বকের জন্য। এতে যে স্যালিসাইলিক এসিড রয়েছে তা ত্বকের একনে দুর করতে সহায়তা করে পাশাপাশি ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্য বজায় রাখে।
- এই ফেসওয়াশটি ডাররামটোলজিস্ট টেস্টেড। এটি পোরসের গভীরে পৌঁছে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং পোরসের ক্লগিং বন্ধ করে। ফলে সহজে ত্বকে আর ব্রণের প্রভাব দেখা দেয় না।
- এর মাইক্রো ক্লিয়ার টেকনোলজি ত্বকের গভীরে স্যালিসাইলিক এসিড পৌঁছাতে সাহায্য করে।
- এর অয়েল-ফ্রি ফর্মুলা ত্বকে ওপেন পোরসের সমস্যা সমাধান করে এবং ত্বককে শুষ্কও করে তোলে না। ফলে ত্বকে অয়েল ব্যালেন্স স্বাভাবিক থাকে এবং ব্রণ ওঠার সম্ভাবনা নিরাময় হয়।
কারা ব্যবহার করতে পারবে?
যাদের ত্বক অতিরক্ত অয়েলি, সব সময় সেবাম নির্গত হয়, তাদের জন্য এটা বেস্ট ফেসওয়াশ। এছাড়া একনে প্রোন, পিম্পল আছে এমন সব স্কিনেই ব্যবহার করা যাবে।
ক্লারিস নিম পিম্পল ডিফেন্স ফেসওয়াশ নিমের প্রাকৃতিক গুণাগুণ সমৃদ্ধ একটি দারুণ কার্যকর ফেসওয়াশ যা সহজেই ত্বকের সমস্ত তেল-ময়লা দুর করে ত্বক ব্রণের প্রাদুর্ভাব কমায়।
উপাদান: নিম এক্সট্র্যাক্ট, হলুদ
উপকারিতা:
- প্রতিদিনের ব্যবহারে ত্বকে অয়েল ব্যালেন্স বজায় থাকে।
- ত্বক থেকে যাবতীয় ইম্পিউরিটি দুর করে ব্রণের প্রাদুর্ভাব কমায়।
- নিমের প্রাকৃতিক গুণাগুণ ত্বকে সজীবতা বজায় রাখে।
- ত্বককে অতিরিক্ত শুষ্ক করে তোলে না।
- এর এন্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য ত্বকের গভীরে থাকা ব্যকতেরিয়া ধ্বংস করে।
- এই ফেসওয়াশে নিমের সাথে রয়েছে হলুদ যা ত্বকে ইনফ্ল্যামেশন দুর করে আলাদা দীপ্তি ছড়ায়।
কারা ব্যবহার করতে পারবে?
একনে প্রোন যে কোনো ত্বকের জন্য এই ফেসওয়াশ কার্যকর। তবে তৈলাক্ত ত্বকে সবচেয়ে বেস্ট রেজাল্ট পাওয়া যায়।
এভারগ্লো একনে ফেসওয়াশ একটা জেল বেইজড ফেসওয়াশ যা এলোভেরা এবং গ্রিন টি এর প্রাকৃতিক নির্যাস থেকে তৈরি। এটি প্রতিদিন ব্যবহারে ত্বক হয়ে ওঠে ব্রণমুক্ত এবং ফিরে পায় হারানো লাবণ্য।
উপাদান: এলোভেরা, গ্রিন টি এক্সট্র্যাক্ট
উপকারিতা:
এই ফেসওয়াশটি ত্বকের সমস্ত তেল-ময়লা দুর করে ব্রণমুক্ত হতে সাহায্য করে।
এটি ত্বককে অতিরিক্ত শুষ্ক করে তোলে না বরং ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রভাব বজায় রাখে।
নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকে কোমলতা ফিরে আসে।
এলোভেরা ও গ্রিন টি ত্বকে পরিপূর্ণ পুষ্টি যোগায়।
ত্বকের কালো কালো ছোপ ছোপ দাগ দুর করে।
স্কিন টোন বজায় রাখে।
সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযোগী।
ফেসওয়াশ ব্যবহার করে সর্বোচ্চ ভালো ফলাফল পেতে চাইলে জানতে হবে এটি ব্যবহারের সঠিক নিয়ম। ভুলভাল ভাবে ফেসওয়াশ ব্যবহার করলে ত্বকে ব্রণের সমস্যা সহজে সমাধান হবে না। চলুন জেনে নিই ধাপে ধাপে কিভাবে ফেসওয়াশ ব্যবহার করবেন।
১। মুখে পানি দিয়ে ভালো করে ভিজিয়ে নিন।
২। পরিমাণমত ফেসওয়াশ হাতে নিয়ে ভালোভাবে ফেনা তৈরি করুন।
৩। এরপর ফেনাটা মুখে আলতো করে মাসাজ করুন।
৪। ২/৩ মিনিট পর অনেক পানি দিয়ে খুব ভালো করে মুখ ধুয়ে নিন।
৫। পাতলা তোয়ালে দিয়ে ড্যাব ড্যাব করে মুখ মুছে নিন।
ত্বকের যত্নে বেস্ট রেজাল্ট পেতে চাইলে আপনাকে সকালে ও রাতে দুইবার ফেসওয়াশ দিয়ে ত্বক পরিস্কার করতে হবে। তবে খেয়াল রাখবেন ফেসওয়াশ যেন চোখের ভিতর না ঢুকে যায়।
ত্বকে প্রতিনিয়ত নানারকম সমস্যা দেখা দেয়। সব কিছুর মধ্যে ব্রণ সবচেয়ে বিরক্তিকর সমস্যা। তবে আপনি যদি নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার রাখেন ও নিয়মিত ত্বক চর্চা করেন তাহলে ব্রণ সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাবেন।