ত্বকের পরিচ্ছন্নতা ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ত্বক আমাদের দেহের সবচেয়ে বড় অঙ্গ এবং এটিই সবচেয়ে বেশি এক্সপোজড থাকে। তাই ত্বক পরিস্কার রাখার বিকল্প নেই।
যদিও অনেক আগে ত্বক পরিস্কারের জন্য ব্যবহার করা হতো সাবান, কিন্তু এখন সেই যুগ পার হয়ে গেছে। সাবানের ক্ষতিকর দিক সবাইই জানেন। আর তাই তো, ত্বক পরিস্কারের হোলি গ্রেইল প্রোডাক্ট হলো ফেসওয়াশ।
একেক ধরনের ত্বকে একেক রকম ফেসওয়াশের প্রয়োজন। তৈলাক্ত ত্বকে এমন ফেসওয়াশ চাই যেন সেটি ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমায়। অপরদিকে শুষ্ক ত্বকের জন্য ময়েশ্চারযুক্ত ফেসওয়াশই বেশি মানানসই। যেসব ত্বকে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণের পরিমাণ বেশি, তাদের ত্বকে আবার আরেক ধরনের ফেসওয়াশ চাই।
তাই অনেকেই একটু কনফিউজড হয়ে যান আসলে নিজের জন্য কোন ফেসওয়াশটি বেছে নেবেন। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো মেয়েদের ত্বকের জন্য কোন কোন ফেসওয়াশ ভালো।
ত্বকের ধরন অনুযায়ী নানারকম ফেসওয়াশ বাজারে রয়েছে। আজকাল সবাইই কম বেশি স্কিনকেয়ার করতে পছন্দ করেন। ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে, ত্বককে স্মুথ ও সফট রাখতে, ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে ফেসওয়াশের বিকল্প নেই। তবে স্কিনের জন্য সবসময় ভালো ব্র্যান্ডের ফেসওয়াশ ব্যবহার করা উচিত। চলুন দেখে নিই মেয়েদের সব ধরনের ত্বকের জন্য সেরা ৫টি ফেসওয়াশ।
মেয়েদের সব ধরনের ত্বকের জন্য বাজেট ফ্রেন্ডলি একটি চমৎকার ফেসওয়াশ হলো ওয়াইসি মিল্ক এক্সট্র্যাক্ট ফেসওয়াশ। এই ফেসওয়াশটি চমৎকার ভাবে ত্বকের কালো ছোপ ছোপ দাগ দুর করে এবং ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে। অনেকেরই রোঁদে নিয়মিত যাতায়াতের কারণে স্কিন টোন ডাউন হয়ে যায়। এই ফেসওয়াশটি নিয়মিত ব্যবহারে স্কিন টোন ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যায়।
চলুন জেনে নিই এই ফেসওয়াশের কি কি কার্যকারিতা রয়েছে।
উপকারিতা-
১। এই ফেসওয়াশের প্রাকৃতিক উপাদান ও উন্নত ফর্মুলা আপনার স্কিন টোনকে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। নানারকম কারণে আমাদের ত্বকে কালো ছোপ ছোপ দাগ, মলিনতা, ডাউন স্কিন টোন ইত্যাদি দেখা দেয়। নিয়মিত এই ফেসওয়াশ ব্যবহারে ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরে আসে।
২। এই ফেসওয়াশের প্রাকৃতিক উপাদান আপনার ত্বকের গভীরে পৌঁছে ত্বকে প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দেয়। ফলে ত্বক হয়ে ওঠে ভিতর থেকে উজ্জ্বল, নরম ও কোমল।
৩। এটি ত্বকের মৃত কোষ দুর করতে সাহায্য করে।
৪। এটি পোরসের গভীরে গিয়ে ডিপ ক্লিন করে ফলে ত্বকে ওপেন পোরসের সমস্যা দেখা দেয় না।
৫। এই ফেসওয়াশের ন্যাচারাল ময়েশ্চারাইজিং এজেন্ট ত্বকে প্রয়োজনীয় ময়েশ্চার যোগান দেয় ফলে ত্বকে শুষ্কভাব থাকে না এবং ফাটল ও ধরে না।
৬। ত্বকের ফাইন লাইন এবং রিংকেল দুর করতে সাহায্য করে।
৭। এটি সব ধরনের ত্বকের জন্যই উপযোগী।
এভারগ্লো একনে ফেসওয়াশ মূলত একটা জেল বেইজড ফেসওয়াশ। এটি এলোভেরা এবং গ্রিন টি এর প্রাকৃতিক নির্যাস সমৃদ্ধ একটি প্রোডাক্ট। আপনার নিত্য ত্বক চর্চায় এই পণ্যের ব্যবহারে ত্বক হয়ে ওঠে ব্রণমুক্ত এবং ফিরে পায় হারানো লাবণ্য।
উপাদান- এলোভেরা, গ্রিন টি এক্সট্র্যাক্ট
উপকারিতা-
১। এই ফেসওয়াশটি ত্বকের সমস্ত তেল-ময়লা দুর করে। ফলে ত্বকে ব্রণ হওয়ার পরিমাণ কমে যায়।
২। এটি ত্বককে অতিরিক্ত শুষ্ক করে তোলে না। ত্বকের স্বাভাবিক ময়েশ্চার লেভেল বজায় রাখে।
৩। এটি নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকে কোমলতা ফিরে আসে এবগ্ন রুক্ষভাব একেবারেই দুর হয়।
৪। এই ফেসওয়াশে রয়েছে এলোভেরা ও গ্রিন টি যা ত্বকে পরিপূর্ণ পুষ্টি যোগায়।
৫। এটি ত্বকের কালো কালো ছোপ ছোপ দাগ দুর করে।
৬। এই ফেসওয়াশ স্কিন টোন বজায় রাখে।
এটি সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযোগী।
সিম্পল ব্র্যান্ডের ফেসওয়াশ থেকে শুরু করে ময়েশ্চারাইজার, টোনারসহ সব প্রোডাক্টই সব ধরনের ত্বকের জন্যই উপযোগী। সিম্পলের ওয়াটার বুস্ট মাইসেলার ফেসিয়াল জেল ওয়াশটি ত্বকে দীর্ঘ সময় হাইড্রেশন ধরে রাখতে সাহায্য করে। চলুন জেনে নিই এই ফেসওয়াশটির উপকারিতা।
উপাদান- প্রোপিলিন গ্লাইকল, সোডিয়াম ক্লোরাইড, গ্লিসারিন, পটাসিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম সাইট্রেট, সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড।
উপকারিতা-
১। সিম্পলের ওয়াটার বুস্ট মাইসেলার ফেসিয়াল জেলটি ত্বকের হাইড্রেশন লেভেল বজায় রাখে। কাজেই আপনার ত্বকে কোন ধরনের ফাটল বা শুষ্কতা অনুভূত হবে না।
২। এতে রয়েছে পেন্টাভিটিন নামের উপাদান যা আপনার ত্বককে লম্বা সময় ধরে ময়েশ্চারাইজড রাখে। শুষ্ক ত্বকে ময়েশ্চার লেভেল ধরে রাখার জন্য এটি একটি হোলি গ্রেইল প্রোডাক্ট।
৩। এর প্রো এমিনো এসিড টেকনোলজি ত্বকে এমিনো এসিডের পরিমাণ বজায় রাখে।
৪। এই ফেসওয়াশে কোন ধরনের এলকোহল, আর্টিফিসিয়াল কালার বা সুগন্ধ নেই।
৫। এই ফেসওয়াশটি পিইটিএ অনুমোদিত এবং ভিগান।
ব্যবহারবিধি-
১। হালকা কুসুম গরম পানিতে মুখ ভিজিয়ে নিন।
২। আঙুলে পরিমাণমত ফেসওয়াশ নিয়ে পানিতে ভিজিয়ে ফোম তৈরি করে নিন।
৩। আঙ্গুল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সারা মুখে ফোম দিয়ে মাসাজ করুন।
৪। কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৫। নরম তোয়ালে দিয়ে মুছে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
বর্তমান সময়ের খুব জনপ্রিয় একটা ব্র্যান্ড দ্য বডিশপ। এই ব্র্যান্ডের দ্য বডিশপ টি ট্রি স্কিন ক্লিয়ারিং ফেসিয়াল ওয়াশ তৈলাক্ত ত্বকের জন্য খুবই জনপ্রিয় একটা ফেসওয়াশ। চলুন জেনে নিই এই ফেসওয়াশের উপকারিতা।
উপাদান- টি ট্রি অয়েল
উপকারিতা-
১। এই ফেসওয়াশটি তৈলাক্ত ত্বক, সেনসিটিভ বা কম্বিনেশন ত্বকের জন্য সমানভাবে কাজ করে।
২। পরিমাণে এত বেশি থাকে যে একবার কিনলেই অনেক লম্বা সময় চলে যায়।
৩। এটি ত্বকের অয়েল ব্যালেন্স করার পাশাপাশি ব্রণের সমস্যা দুর করে।
৪। এটি ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব কমিয়ে আনলেও ত্বককে শুষ করে তোলে না ফলে ব্রেকআউট হতে দেয় না।
৫। মেন্থল বেইজড হওয়ার কারণে এটা দিয়ে খুব সুন্দর এরোমা বের হয় যা সারাদিন আপনাকে একটা সতেজ অনুভূতি দেয়।
ক্যাটাফিল অয়েলি স্কিন ক্লিনজার আরেকটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। যারা একটু জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে চান তারা এই ক্লিনজারটি ভীষণ পছন্দ করেন। চলুন জেনে নিই এর উপকারিতা বা বেনেফিটস কি কি।
উপকারিতা-
১। এতে কৃত্রিম কোনো সুগন্ধি ব্যবহার করা হয় না।
২। এটি লিকুইড ফর্মে আসে। তৈলাক্ত ত্বকে অতিরিক্ত তেলতেলে ভাব এইফ এসওয়াশে সহজেই দুর হয়।
৩। এটি ডার্মাটলজিস্ট টেস্টেড এবং সোডিয়াম লরেট সালফেট ফ্রি
৪। এই ফেসওয়াশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো এটি ত্বকের তৈলাক্তটা দুর করে, অয়েল ব্যালেন্স করে এবং সেই সাথে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে।
৫। ত্বকের পিএইচ লেভেল ধরে রাখে।
৬। নারী ও পুরুষ উভয়েই ব্যবহার করতে পারবে।
তৈলাক্ত ত্বকে সেবামের পরিমাণ ইমব্যালেন্সের কারণে অতিরিক্ত তেল জমা এবং তা থেকেই মূলত দেখা দেয় ব্রণের সমস্যা। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য তাই চাই বাড়তি যত্ন।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এমন ফেসওয়াশ লাগবে যা ত্বকে অয়েল ব্যালেন্স করবে। দ্য বডিশপ টি ট্রি স্কিন ক্লিয়ারিং ফেসিয়াল ওয়াশ এবং ক্যাটাফিল অয়েলি স্কিন ক্লিনজার চমৎকার দুটো ফেসওয়াশ যা কিনা আপনার তৈলাক্ত ত্বকের অয়েল কন্ট্রোলে সাহায্য করবে।
শুষ্ক ত্বকের প্রধান সমস্যা খসখসে ভাব ও শুষ্কতা। কোনোভাবেই ত্বক নরম ও কোমল হয় না কারণ ত্বকে ময়েশ্চার ব্যালেন্স ঠিক থাকে না। এছাড়া শরীরে পানির পরিমাণ ঠিক না থাকার কারণে ত্বকে হাইড্রেশন লেভেল ঠিক থাকে না। ফলে ত্বকে মৃত কোষের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং কালো ছোপ ছোপ দাগ দেখা দেয়।
কাজেই শুষ্ক ত্বকের জন্য এমন ফেসওয়াশ প্রয়োজন যা ত্বকে ময়েশ্চারের লেভেল ধরে রাখবে যেন ত্বক দ্রুত শুষ্ক হয়ে ফেটে না যায়। এ জন্য সিম্পল কাইন্ড টু স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ফেসিয়াল ওয়াশ, ক্যাটাফিল জেন্টল ফোমিং ক্লিনজার এই ফেসওয়াশ দুটো অনেক ভালো। এই দুইটা ফেসওয়াশ আপনার ত্বকের শুষ্বকতা যেমন দুর করবে তেমনি ত্বককে করবে মসৃণ, নরম ও কোমল।
মেয়েদের সব ধরনের ত্বকের জন্য রয়েছে এভারগ্লো একনে ফেসওয়াশ জেল, ওয়াইসি মিল্ক এক্সট্র্যাক্ট ফেসওয়াশ, সিম্পল ওয়াটার বুস্ট ময়েশ্চারাইজিং ফেসিয়াল জেল ওয়াশ সহ অনেক ধরনের ফেসওয়াশ। এই ফেসওয়াশ গুলো সব ধরনের ত্বকের জন্যই তৈরি করা হয়েছে। কাজেই নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের সমস্যা থেকে দ্রুতি মুক্তি পেতে পারেন।
ত্বকের যত্নে ফেসওয়াশের কোন বিকল্প নেই। স্কিনকেয়ারের প্রথম ধাপই হলো ক্লিনজিং। কাজেই স্কিনের সাথে পার্ফেক্ট ম্যাচ হয় এমন ফেসওয়াশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নানা ধরনের ফেসওয়াশের মধ্যে থেকে আপনার ত্বকের উপযোগী ফেসওয়াশটি বেছে নিতে আমাদের আজকের লেখাতই নিশ্চয়ই আপনাকে সাহায্য করবে।