মুখের ত্বকে ওপেন পোরসের সমস্যা নিয়ে অনেকেই বেশ দুশ্চিন্তায় ভোগেন। বিশেষ করে নাকের দুপাশে ও গালে বড় বড় পোরসের ছিদ্র থাকলে ত্বকে না কোন মেকআপ মানায় আর না ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। পোরস একবার বড় হয়ে গেলে সেটা কি আবারো ছোটো করা সম্ভব বা আদৌ কি ওপেন পোরসের সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে?
ওপেন পোরসের সমস্যা কীভাবে দূর হবে তা জানার আগে আমাদের জানতে হবে পোরস আসলে কি, আমাদের ত্বকে এর কাজ কি এবং কীভাবে বেসিক স্কিনঙ্কেয়ার রুটিনের সাহায্যে যে কোন বয়সী মানুষই ওপেন পোরসের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
এই আর্টিকেলে আমরা ওপেন পোরসের যাবতীয় সমস্যা নিয়ে আলাপ করবো।
পোরসের খুব সহজ বাংলা অর্থ হলো রোমকূপ। আমাদের ত্বকের উপরিভাগে অক্সিজেনের চলাচলের জন্য যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে সেটিই মূলত পোরস। ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো হলে খালি চোখে পোরস দেখতে পাওয়ার কথা না।
পোরসের মূল কাজ ত্বক থেকে ঘাম বের করে দেয়া। অর্থাৎ অক্সিজেনের চলাচল ঠিক রেখে ত্বক থেকে অতিরিক্ত ঘাম বের করে দেয়া যেন ত্বকে ব্রণের প্রাদুর্ভাব দেখা না দেয়। এছাড়া পোরস ত্বকের টেম্পারেচার কন্ট্রোল করে। পাশাপাশি সেবাম সিক্রেশনের মাধ্যমে ত্বকের অয়েল ব্যালেন্স করে।
কাজেই, আপনি যদি ত্বকের যত্ন ঠিকভাবে না নেন তাহলে ত্বকের ওপেন পোরসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেসব কারণে ত্বকে ওপেন পোরসের সমস্যা দেখা দেয়-
১। যদি ত্বকের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়।
২। বা বয়সের সাথে সাথেও নাকের চারপাশে বা গালে পোরসের ছিদ্র বড় হয়ে ভিজিবল হতে পারে।
৩। যাদের ত্বক তৈলাক্ত বা ত্বকে অতিরিক্ত সেবাম জন্ম নেয়, তাদের ত্বকের পোরস ও বড় হয়ে যেতে পারে।
৪। খাওয়া দাওয়া ও ঘুমের অনিয়মের কারণেও ত্বকে ওপেন পোরসের সমস্যা দেখা দেয়।
৫। ব্ল্যাকহেডস বা ব্রণের প্রাদুর্ভাব থেকে ওপেন পোরসের জন্ম হয়।
৬। কোলাজেন লুজ হয়ে যাওয়া।
আরো নানা কারণেই ত্বকে ওপেন পোরসের জন্ম হতে পারে। কাজেই ত্বক যত টানটান ও মসৃণ রাখবেন ততই ত্বকে পোরসের ভিজিবিলিটি কমে যাবে।
মুখে ওপেন পোরস দেখা দিলে একেবারে সেটা রিমুভ করা সম্ভব না হলেও পোরসের সাইজ ছোটো করে এনে ভিজিবিলিটি কমানো সম্ভব। চলুন জেনে নিই কী কী উপায়ে আপনি সহজেই মুখের ওপেন পোরস দূর করতে পারবেন।
ত্বক নিয়মিত পরিস্কার থাকলে টানটান ভাব বজায় থাকে ফলে সহজে পোরস দেখা যায় না। কাজেই আপনার ত্বকে নিয়মিত ক্লিনজিং ও স্ক্রাবিং করতে হবে।
ত্বকের ধরন ও বয়স অনুযায়ী ক্লিনজার বেছে নিয়ে সেটা দিয়ে নিয়মিত সকালে ও রাতে ক্লিঞ্জ করে নিতে হবে। বয়স যদি ২০ এর কম হয় তবে যে কোন স্ক্রাব দিয়ে সপ্তাহে একবার এক্সফলিয়েট করে নিলেই যথেষ্ট। নিয়মিত এক্সফলিয়েট করলে কিন্তু ত্বকের মৃত কোষ দূর হয় এবং পোরসের সাইজ ছোটো থাকে। এছাড়া স্ক্রাব করলে ত্বকের পোরস ক্লগড হয় না ফলে স্কিন থাকে টানটান।
যাদের বয়স ২০-২৫ এর বেশি কিন্তু ত্বকে দেখা দিয়েছে ওপেন পোরস, তারা অবশ্যই সপ্তাহে ২বার অন্তত স্ক্রাব দিয়ে এক্সফলিয়েট করবেন। এছাড়া মেকআপ করলে অবশ্যই ডাবল ক্লিনিং পদ্ধতিতে মেকআপ তুলবেন। এতে করে পোরসের ক্লোস হবার সম্ভাবনা কমে যায়।
ত্বকের ধরন বুঝে সব বয়সেই টোনার ব্যবহার করা যায়। যাদের ত্বকের বয়স কম, তারা চাইলে রোজ ওয়াটারকে ও টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু যাদের বয়স ২০-২৫, তাদেরকে ত্বকের ধরন বুঝে টোনার ব্যবহার করতে হবে।
টোনার ব্যবহার করলে ত্বকের পিএইচ ব্যালেন্স ঠিক থাকে এবং পোরস টাইট হয় তাই ওপেন পোরসের সমস্যা অনেকাংশেই দুর হয়।
ত্বকের যত্নে সিরামের জুড়ি নেই। তবে বয়স যদি ২০ বা তাঁর কম হয় তবে কোনোভাবেই সিরাম ব্যবহার করা যাবে না। ত্বকের বয়স ২০ এর বেশি বা ২৫ হলে তখন বিউটিসিয়ানের রিকমেন্ডেশন অনুযায়ী সিরাম ব্যবহার করতে হবে। সঠিক নিয়মে এবং সঠিক সিরাম ব্যবহার না করলে ত্বকে উল্টো রিএকশন হতে পারে বা পোরসের সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।
নিয়াসিনামাইড, স্যালিসাইলিক এসিড ইত্যাদি উপাদানে ভরপুর সিরাম ওপেন পোরসের সমস্যা দুর করতে দারুণ সহায়ক। তবে নিজের ত্বকের ধরন বুঝে এসব ব্যবহার করতে হবে।
ত্বকের যত্নে এলোভেরা জেল একটা হোলি গ্রেইল প্রোডাক্ট। যাদের ত্বকে ওপেন পোরস একদম ভিজিবল তারা যদি প্রতিদিন সকালে আর রাতে তাজা এলোভেরা জুস মুখে মাসাজ করেন তাহলে ওপেন পোরসের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
একদম ফ্রেশ এলোভেরা কেটে ব্লেন্ড করে জুস বানিয়ে মাসাজ করে দশ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। এরপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন, নিয়মিত এইভাবে ত্বকচর্চা করলে পোরসের আকার ধীরে ধীরে ছোটো হয়ে আসবে।
অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার কিন্তু প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে খুব ভালো কাজ করে। সম পরিমাণ পানি ও ভিনেগার নিয়ে ভালোভাবে মিক্স করে কটন প্যাডের সাহায্যে সারা মুখে ড্যাবড্যাব করে লাগিয়ে শুকিয়ে নিন। এতে করে ত্বকের পোরস টাইট হবে ও ভিজিবিলিটি কমে আসবে।
ওপেন পোরসের সমস্যা সমাধানে ডিমের সাদা অংশ বেশ কার্যকর। এর সাথে কিছুটা ওটমিল পাউডার আর লেবুর রস মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করে মুখে লাগান। মাস্ক শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে হাল্কাভাবে মুখে মাসাজ করুন। মুখ পানি দিয়ে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। এভাবে কিছুদিন ব্যহারে ত্বকের ওপেন পোরসের সমস্যা কমে আসবে।
ত্বকের যত্নে নানারকম স্কিন কেয়ার রুটিন মেনে চললেও কোনোভাবেই সমস্যা দূর হবে না যদি কিনা আপনি ঠিক মত খাওয়াদাওয়া করেন। দিনে কমপক্ষে ১৪-১৬ গ্লাস পানি ও প্রচুর ভিটামিন সমৃদ্ধ ফলমূল খেলে তাঁর প্রভাব ত্বকের উপর পড়ে এবং ওপেন পোরস ধীরে ধীরে টাইট হয়ে যায়। তবে সেই সাথে প্রতিদিন অবশ্যই ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমাতেও হবে।
আপনি যদি সঠিকভাবে নিজের ত্বকের যত্ন নেন তবে ওপেন পোরসের সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাবেন। তবে হেলদি ডায়েট মেনে চলা, ঘুমের পরিমাণ ঠিক রাখা, বেশি করে পানি খাওয়া এসব ও মেনে চলতে হবে। সেই সাথে সঠিক প্রোডাক্ট নির্বাচন করতে হবে স্কিন কেয়ারের জন্য। তাহলেই ত্বকের বয়স হয়ে গেলেও সহজে বোঝা যাবে না।